কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি।। একটি দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সবার জানা দরকার। সবচেয়ে বেশি জানা দরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। আগামীর প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অর্জন, চেতনাবোধ ছড়িয়ে দিতে হবে। একটি গর্বিত এবং দেশপ্রেমিক জাতি গঠন করতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী’র বরিশাল বিভাগীয় সম্মেলনে আলেচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর প্রতিষ্ঠাতা এবং চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। তিনি আরও বলেন, ইতিহাস পড়লেই হবেনা, ইতিহাসকে ধারণ করতে হবে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-চেতনাবোধ ছড়িয়ে দিতে হবে। ইতিহাস বিষয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সবাই বলে ইতিহাস পড়লে চাকরি পাওয়া যায়না। এটা একদম ভুল কথা। ইতিহাস পড়ে অনেক গুণী মানুষ যেমন তৈরি হচ্ছে, তেমনি ইতিহাস পড়ে অনেকেই প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরি করছে। পড়াশোনা ছাড়া শিক্ষক হওয়া যায় না, চাকরি করা যায়। বাসায় শুধু চেকবই নয়, পড়ার বইও রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমি ইতিহাসকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছি। যার কারণে ইতিহাস একটা জনপ্রিয় বিষয়ে পরিনত হয়েছে। আমরা খুলনার গণহত্যা জাদুঘরের মাধ্যমে ১৫০ জন নতুন লেখক তৈরি করেছি। এটাও ইতিহাস চর্চার অগ্রগতি বলে আমি মনে করি।
শনিবার বেলা ১১ টায় পর্যটন কর্পোরেশনের হলরুমে এ সম্মেলন শুরু হয়। নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহনের মধ্য দিয়ে রাতে এ সম্মেলন শেষ হয়। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি খোন্দকার অলিউল ইসলাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ইতিহাস পাঠ শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে করলেই হবেনা, স্কুল পর্যায়েও ইতিহাস পাঠের উদ্যোগ নিতে হবে। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ইতিহাস চর্চাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সকল মানুষ যদি ইতিহাস পাঠ করে, ইতিহাস চর্চা করে তাহলে সকল মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম তৈরি হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, ২০০৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক পর্যায়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বাধ্যতামূলক করেছে। এখন নবম-দশম শ্রেণিতে ইতিহাস পড়া বাধ্যতামূলক করার চিন্তা চলছে। দেশকে সমৃদ্ধ করতে হলে সে জাতির ইতিহাস, সভ্যতার ক্রমবিকাশ জানা জরুরী। আমি এক কথায় বলতে পারি, তৃণমূল মানুষের কথাই আমাদের ইতিহাসের উপজিব্য বিষয়। আমরা তৃণমূলের মানুষের ভাবনা, তাঁদের চিন্তাধারাকেও ইতিহাসের অংশ বলে মনে করি।
এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর পটুয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি মো. নাজমুল আলম, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর ঝালকাঠি জেলা শাখার সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর ভোলা জেলা শাখার সভাপতি জাহান জেব আলম প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
অসাম্প্রদায়িক ও গণমুখী ইতিহাস চর্চার জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর বরিশাল বিভাগীয় এ সম্মেলনে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন কলেজের ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বাংলা বিভাগের শিক্ষকগণসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনষ্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. মনিরুজ্জামান শাহীন ১৯৭১ গণহত্যা ; প্রেক্ষিত বরিশাল এবং কতিপয় বৈশিষ্ট্য মূল্যায়ন, কলাপাড়া মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নেছারউদ্দিন আহমেদ টিপু কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, আখতার হোসেন চৌধুরী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফৌজিয়া খানম অশ্রু মুক্তিযুদ্ধে ৯ নং সেক্টর; প্রসঙ্গ বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট ফজলুল হক, নাজিরপুর ইউনাইটেড কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লুলু আল মারজান বরিশালের অসহযোগ আন্দোলনে সাংস্কৃতিক সংগঠনের ভূমিকা এবং নাজিরপুর ইউনাইটেড কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক বিএম শহীদুল ইসলাম মাখন, বরিশালের কৃষক সমাজ ও শের বাংলা এ কে ফজলুল হকের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এসব প্রবন্ধের ওপর আলোচকরা তাঁদের মূল্যবান মতামত উপস্থাপন করেন।
সবশেষে কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজের প্রভাষক শহীদুল ইসলামের পরিচালনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
#
মোয়াজ্জেম হোসেন
কলাপাড়া