কোম্পানীগঞ্জে প্রতিনিয়ত হামলা ও হুমকির শিকার হচ্ছেন সংবাদকর্মীরা
মোঃ মাসুদ রানা – নোয়াখালী প্রতিনিধিঃরাজনৈতিক অস্থিরতা ও আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত একবছর যাবত অস্থির হয়ে আছে শান্তির জনপদ খ্যাত নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। এখানে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে মামলা হামলার ঘটনা, আর এসব ঘটনা থেকে রেহাই পাচ্ছে না সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে সংবাদকর্মীরা পর্যন্ত।
কোম্পানীগঞ্জে এপর্যন্ত বেশ কয়েকজন সাংবাদিক হামলার শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, কেউ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন কেউ বা হননি। এছাড়াও সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এবছরের ২০ শে ফেব্রুয়ারি উপজেলার চাপরাশিরহাটে আওয়ামীলীগের দু গ্রুপের সংঘর্ষে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির নামের এক তরুণ সাংবাদিক। বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির এর মৃত্যু সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করলেও এখন পর্যন্ত সে হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ হয়নি।
মুজাক্কির হত্যার রেশ না কাটতেই হামলার শিকার হন দৈনিক চলমান সময়ের চীফ রিপোর্টার প্রশান্ত সুভাষ চন্দ নামের আরেক সাংবাদিক, তাকে তার বাড়িতে গিয়ে পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দেয় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় মামলা করা হলেও গ্রেফতার করা হয়নি কাউকে।
হামলা চালানো হয় প্রেসক্লাব কোম্পানীগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন রনির বসুরহাট বাজারের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে, লাঞ্চিত করা হয় তাকে, কিন্তু কোনো বিচার পাননি তিনি।
এছাড়াও গত ২৯ শে সেপ্টেম্বর মোবাইল ফোনে হুমকি প্রদান করা হয় আঞ্চলিক পত্রিকা নোয়াখালী প্রতিদিনের প্রকাশক ও সম্পাদক রফিকুল আনোয়ার কে, একইদিনে একই নাম্বার থেকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে হুমকি দেওয়া হয় দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহবুবুর রহমানকে। হুমকি প্রদানের ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত হুমকি দাতাকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
সর্বশেষ গতকাল (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বসুরহাট বাজারে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন দৈনিক ঢাকা প্রতিদিন ও নোয়াখালী প্রতিদিন পত্রিকার কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ নাসির উদ্দীন। তিনি সন্ধ্যায় একটি দোকানে চা খাওয়া অবস্থায় তার উপর হামলা চালায় ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় স্থানীয় জনগণ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে নিজ বাসায় বিশ্রামে রয়েছেন তিনি।
সংবাদকর্মীরা জানান, একের পর এক সংবাদকর্মীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটলেও উপযুক্ত কোনো বিচার পায় না এখানকার স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। হামলা ও মামলার ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে দিনাতিপাত করতে হয় কোম্পানীগঞ্জের বেশিরভাগ সাংবাদিকদের। এখানকার অনেক সংবাদকর্মী জানিয়েছেন প্রাণের ভয়ে পেশা পরিবর্তন করতে ও বাধ্য হয়েছেন তারা।
এপর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জে যতগুলো সাংবাদিক হামলার ঘটনা ঘটেছে সবগুলো ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করেছেন জেলা – উপজেলায় কর্মরত সংবাদকর্মীরা। অন্যথায় তারা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন।