তেতুলিয়া নদীতে মা ইলিশ শিকারের মহোৎসব, চলছে চোর পুলিশ খেলা

এম.জাফরান হারুন, নিজস্ব প্রতিনিধি, পটুয়াখালী:: পটুয়াখালী বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীতে চলছে ইলিশ শিকারের মহোৎসব। মোবাইলফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে মিলছে মাছ। তেঁতুলিয়া নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ধান ক্ষেতের আড়ালে চলে বেচাকেনা। দ্রুত পৌঁছে দিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মটর সাইকেল। অভিযোগ রয়েছে নদীতে অভিযান চালানোর সময় ট্রলারে বসেই ইলিশ ফ্রাই করে খাওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, এক শ্রেণির অসাধু জেলে প্রশাসনের ঢিলেঢালা অভিযানের সুযোগ নিয়ে তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ শিকারে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ইলিশ রক্ষায় স্থানীয় কমিটির অসাধু লোকজন ও এক্সটেনশন ওয়ার্কারের যোগসাজসে দিনে রাতে চলছে এই শিকার। আছে অভিযান পরিচালনায় নদীতে গিয়ে ট্রলারে বসেই ইলিশ ফ্রাই করে খাওয়ার অভিযোগও।

আর মোবাইলফোনে খোজঁ-খবর রেখে নদী পাড়ের ধান ক্ষেতের পাশে কিছুটা আড়াল-আবডালে চলে কেনাবেচার মহরত। রাতের আধারে কিংবা সকালে সূর্যের আলো ফোটার আগেই লেনদেন সেরে মোটরসাইলে দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে। ইলিশ শিকারের দায়ে প্রশাসনের হাতে ধরাপড়লে সাজা এড়াতে ও মুচলেকার মতো সহজ শর্তে মুক্তি পেতে অনেকে আবার কৌশল হিসেবে শিশু-কিশোরদেরকেও ব্যবহার করছেন শিকারের কাজে।

অভিযোগ উঠছে টাকার বিনিময়ে ধরা পড়া কয়েক জেলের ছেড়ে দেয়ারও। নিষেধাজ্ঞায় অসাধু জেলেদের কারণে বাঁধার মুখে পড়েছে ইলিশের নির্ভিঘ্নে প্রজনন। অসাধু ভোজন রসিকদের অনেকের দৃষ্টি এখন তেঁতুলিয়ার সু-স্বাদু ডিমওয়ালা মা ইলিশের দিকে।

বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর ) সরেজমিনে নাজিরপুর ইউপির ডানিডা রাস্তায়, কালাইয়া ইউপির শৌলা রাস্তায় ও চরকালাইয়া রাস্তায় দেখা গেছে বস্তার তৈরী ব্যাগে ও হাতে ঝুঁলিয়ে মোটরসাইকেলযোগে দ্রুত ইলিশ মাছ নিয়ে সটকে পড়ার দৃশ্য।

ধুলিয়া এলাকার মাছ ব্যবসায়ি দুলাল নামে একজন জানান, ছোট বড় ইলিশ ধরা পড়ছে তেঁতুলিয়ায়। বেপরোয়া শিকারিরা বাদবিচার না করে সুযোগমতো জালও ফেলছে নদীতে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতে ও প্রশাসনের অভিযান পরিচালনার অবসরে সুযোগ বুঝে জেলেরা নদীতে শিকার করছে ইলিশ। সাইজে ছোট বড় হলেও শিকার করা এসব অধিকাংশ মাছের পেটেই রয়েছে ডিম। নদী কুলের নিমদী, ধানদী, ছয়হিস্যা, ডালিমা, চরওয়াডেল, চরব্যারেট, চরমিয়াজান, চরফেডারেশন, তালতলী, রায়সাহেবের চর, চরকালাইয়া, শৌলা, বগীবাজার, মমিনপুর, ধুলিয়া, বাদামতলী এলাকায় চরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট খালে, ঝোপে-ঝাড়ে, ধানক্ষেতে, রাস্তার পাশে ও বাসা বাড়িতে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। কোথাও বসছে এখন অস্থায়ী ইলিশের হাট। প্রজনন নির্বিঘ্নে করে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি করা উচিৎ বলে মনে করছেন তিনি।

এদিকে চরকালাইয়া ও শৌলার নাম না বলা শর্তে কয়েকজন জানান, এ অবরোধে কালাইয়া নৌ পুলিশ ফাড়িতে কিছু অসাধু জেলেরা আগেই টাকা দিয়ে কনটাক করে রাখে এবং যখন পুলিশ অভিযানে নামে তখনই তারা এক ফাকে মোবাইল করে ওই অসাধু জেলেদের জানিয়ে দেয়া হয় যে আমরা অভিযানের জন্য নদীতে আসতেছি আপনারা এখন উঠে যান আবার যখন আমরা অভিযান থেকে চলে আসবো তখন আবার আপনাদেরকে মোবাইল করে জানিয়ে দেয়া হবে তখনই আবার আপনারা জাল ফেলবেন।

প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ রক্ষা আন্দোলন সেভ দি বার্ড এ্যান্ড বি’র পরিচালক মন্ডলীর একজন শামসুন নাহার জানান, প্রজনন সময়ে নির্ভিঘ্নে ডিম ছাড়তে না পাড়া ও পরবর্তিতে কাঁচকি, চাপিলা, জাটকাসহ বিভিন্ন নামে ছোট ইলিশ শিকারের কারণে দিনদিন কমছে ইলিশ মাছ। নিষেধাজ্ঞার আগে পড়েও ইলিশ মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। এই ইলিশের পোনা কাঁচকি, চাপিলা, জাটকা নামে নদী থেকে জেলেদের বাঁধা, পাইর, কোনা, পকেটজাল, মসুর জাল, কোদাল জাল, বেড়জালে শিকার হলেও তা দেখার কেউ থাকে না। উপরন্তু বৈশিক আবহাওয়া পরিবর্তণের বিরুপ প্রভাবের এই সময়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তা যথাযথ বাস্তবায়ন না করে ঢিলেঢালা অভিযানে এক শ্রেণির অসাদু কর্মচারী, পাইকার, আড়ৎদাড়, প্রভাশালীসহ জেলেদের অন্যায় উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘একটি ইলিশ মাছ অন্তত ১০-২০ লাখ ডিম ছাড়ে। এতো পোনা বড় হয়ে কোথায় হারায়। মাছে মাছে তেঁতুলিয়া নদী ভরে ওঠার কথা। উল্টো তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ মাছ কমে গেছে আগের তুলনায়।

কালাইয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমাদের অভিযান প্রতিনিয়ত চলছে। আমারা নৌ পুলিশ, কোষ্টগার্ড, নৌ বাহিনী একসঙ্গে হয়ে অভিযান পরিচালনা করি। কিন্তু ওরকমের তথ্য আমার জানা নাই।

এবিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় অঞ্চল নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, আপনার তথ্য সঠিক হতে পারে। তবে এব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।

উল্লেখ, গত ৪অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত প্রজনন মৌসুমে চিহ্নিত করে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মওজুদ, বাজারজাত, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও দন্ডনীয় অপরাধ। ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার জুড়ে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মতামত জানান