ঢাকা ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫
সংবাদ শিরোনামঃ
বিশিষ্টজনদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত “বাউফল সাংবাদিক ক্লাব” এর কমিটি ঘোষণা রূপগঞ্জে যানজট নিরসনে শতাধিক শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবীর দায়িত্ব পালন কুয়াকাটায় ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার বিরুদ্ধে বন্দর ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ মিছিল দুমকিতে গণধর্ষণের ঘটনায় অপর আসামি সিফাত মুন্সি গ্রেফতার স্কাউট পিএস চূড়ান্ত মূল্যায়নে বরিশাল বিভাগে কলাপাড়া সেরা নারায়ণগঞ্জে ছাত্রশিবিরের মতবিনিময় সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল

চাচার হাতে ভাতিজা খুন, প্রতিবাদে চাচার ঘর পুড়িয়ে দিলো জনতা

এম জাফরান হারুন
  • আপডেটঃ ১০:৫৯:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / 117

প্রতিবাদে চাচার ঘর পুড়িয়ে দিলো জনতা

চাচার হাতে ভাতিজা খুন, প্রতিবাদে চাচার ঘর পুড়িয়ে দিলো জনতা

পটুয়াখালীর গলাচিপায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে চাচার হাতে খুন হয়েছেন ভাতিজা শামিম মিয়া (৩০)। এসময় গুরুতর আহত হয়েছেন নিহত শামীমের বাবা অজেদ সিকদার (৫৫) ও বড় ভাই রেজাউল ইসলাম (৩২)। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

এঘটনায় স্থানীয় জনতারা ক্ষোভে ও প্রতিবাদে খুনি চাচার বসতঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড গ্রামারোদন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় শামিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নিহত শামিম পেশায় একজন অটোরিকশা চালক ছিলেন। মৃত্যু শামিমের জুনায়েদ (৪) ও জুম্মান (দেড় বছর) নামের দুটি নাবালক সন্তান রয়েছে।

চাচার হাতে ভাতিজা খুন, প্রতিবাদে চাচার ঘর পুড়িয়ে দিলো জনতা

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কুদ্দুস সিকদার ও অজেদ সিকদারের মধ্যে বাড়ির জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। অজেদ সিকদার সম্প্রতি আদালতের মাধ্যমে ওই জমিতে ঘর তুলতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ১৪৪ ধারা জারি করেন। তবে কুদ্দুস সিকদার আদালতের আদেশ অমান্য করে জোরপূর্বক ঘর তোলা শুরু করলে অজেদ সিকদার থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ এসে ঘর তোলার কাজ বন্ধ করে দিলেও কুদ্দুস সিকদার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আবারও ঘর তুলতে গেলে বাধা দেন অজেদ সিকদার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কুদ্দুস সিকদার (৫৫), তার ছেলে এনামুল সিকদার (২৬) ও স্ত্রী রেহেনা বেগম (৪০) মাটি কাটার কোদাল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অজেদ সিকদারের ওপর হামলা চালায়।

প্রতিবাদে চাচার ঘর পুড়িয়ে দিলো জনতা

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে তারা অজেদ সিকদারকে মারধর করলে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন তার দুই ছেলে শামিম ও রেজাউল। তখন তাদেরও এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। হামলায় তিনজনই শরীরের বিভিন্ন অংশে ও মাথায় মারাত্মকভাবে আহত হন। স্বজনরা আহতদের উদ্ধার করে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে ওইদিনই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে শামিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তিনি মারা যান। এদিকে রেজাউল ও অজেদ সিকদারও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন বলে জানিয়েছেন পরিবার। এঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত কুদ্দুস সিকদার, এনামুল সিকদার ও রেহেনা বেগম পলাতক রয়েছেন। তবে তাদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।

চাচার হাতে ভাতিজা খুন, প্রতিবাদে চাচার ঘর পুড়িয়ে দিলো জনতা

ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গলাচিপা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দুজ্জামান ও থানার ওসি মোঃ আশাদুর রহমান।

এদিকে রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে শামিমের জানাজা নামাজ শেষে উত্তেজিত জনতা খুনি চাচা কুদ্দুস সিকদারের বাড়ির দিকে এগিয়ে যায় এবং “খুনির বিচার চাই” স্লোগান দিতে দিতে কুদ্দুস সিকদারের নির্মাণাধীন বসতঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়। এসময় জনতারা বিক্ষোভ মিছিল থেকে দ্রুত খুনিদের ফাঁসি নিশ্চিত করার দাবি জানান। ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস গিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে ঘরটি আগুন পুড়ে কয়লা হয়ে যায়।

নিহত শামিমের স্ত্রী আয়শা বেগম বলেন, “আমার দুই ছোট বাচ্চা এখন এতিম হয়ে গেল! আমার স্বামীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আমি দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই!” রেজাউলের স্ত্রী খাদিজা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা পুলিশের সহযোগিতা নিয়েছিলাম, পুলিশ কাজ বন্ধও করিয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না। কুদ্দুস সিকদার ও তার ছেলে পরিকল্পিতভাবে আমার দেবরকে মেরে ফেলল। আমার স্বামী ও শ্বশুরের অবস্থাও ভালো না।”

প্রতিবাদে চাচার ঘর পুড়িয়ে দিলো জনতা

গলাচিপা থানার ওসি মোঃ আশাদুর রহমান বলেন, “এ ঘটনায় মামলা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। লাশ পোস্টমর্টেম শেষে লাশ দাফন করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। দ্রুতই আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে।” ওসি আরও বলেন, এদিকে রোববার দুপুরের দিকে শামীমের লাশ দাফন শেষে উত্তেজিত জনতা কুদ্দুস সিকদারের বসতঘরে আগুন দিয়ে পুড়ে ধ্বংস করেছে বলে জানা গেছে।

চাচার হাতে ভাতিজা খুন, প্রতিবাদে চাচার ঘর পুড়িয়ে দিলো জনতা

আরও পরুনঃ কলাপাড়ায় প্রথম বিভাগ ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে টুটুল-মেহেদী জুটি চ্যাম্পিয়ন

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগসঃ

চাচার হাতে ভাতিজা খুন, প্রতিবাদে চাচার ঘর পুড়িয়ে দিলো জনতা

আপডেটঃ ১০:৫৯:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
চাচার হাতে ভাতিজা খুন, প্রতিবাদে চাচার ঘর পুড়িয়ে দিলো জনতা

পটুয়াখালীর গলাচিপায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে চাচার হাতে খুন হয়েছেন ভাতিজা শামিম মিয়া (৩০)। এসময় গুরুতর আহত হয়েছেন নিহত শামীমের বাবা অজেদ সিকদার (৫৫) ও বড় ভাই রেজাউল ইসলাম (৩২)। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

এঘটনায় স্থানীয় জনতারা ক্ষোভে ও প্রতিবাদে খুনি চাচার বসতঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড গ্রামারোদন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় শামিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নিহত শামিম পেশায় একজন অটোরিকশা চালক ছিলেন। মৃত্যু শামিমের জুনায়েদ (৪) ও জুম্মান (দেড় বছর) নামের দুটি নাবালক সন্তান রয়েছে।

চাচার হাতে ভাতিজা খুন, প্রতিবাদে চাচার ঘর পুড়িয়ে দিলো জনতা

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কুদ্দুস সিকদার ও অজেদ সিকদারের মধ্যে বাড়ির জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। অজেদ সিকদার সম্প্রতি আদালতের মাধ্যমে ওই জমিতে ঘর তুলতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ১৪৪ ধারা জারি করেন। তবে কুদ্দুস সিকদার আদালতের আদেশ অমান্য করে জোরপূর্বক ঘর তোলা শুরু করলে অজেদ সিকদার থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ এসে ঘর তোলার কাজ বন্ধ করে দিলেও কুদ্দুস সিকদার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আবারও ঘর তুলতে গেলে বাধা দেন অজেদ সিকদার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কুদ্দুস সিকদার (৫৫), তার ছেলে এনামুল সিকদার (২৬) ও স্ত্রী রেহেনা বেগম (৪০) মাটি কাটার কোদাল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অজেদ সিকদারের ওপর হামলা চালায়।

প্রতিবাদে চাচার ঘর পুড়িয়ে দিলো জনতা

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে তারা অজেদ সিকদারকে মারধর করলে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন তার দুই ছেলে শামিম ও রেজাউল। তখন তাদেরও এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। হামলায় তিনজনই শরীরের বিভিন্ন অংশে ও মাথায় মারাত্মকভাবে আহত হন। স্বজনরা আহতদের উদ্ধার করে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে ওইদিনই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে শামিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তিনি মারা যান। এদিকে রেজাউল ও অজেদ সিকদারও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন বলে জানিয়েছেন পরিবার। এঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত কুদ্দুস সিকদার, এনামুল সিকদার ও রেহেনা বেগম পলাতক রয়েছেন। তবে তাদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।

চাচার হাতে ভাতিজা খুন, প্রতিবাদে চাচার ঘর পুড়িয়ে দিলো জনতা

ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গলাচিপা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দুজ্জামান ও থানার ওসি মোঃ আশাদুর রহমান।

এদিকে রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে শামিমের জানাজা নামাজ শেষে উত্তেজিত জনতা খুনি চাচা কুদ্দুস সিকদারের বাড়ির দিকে এগিয়ে যায় এবং “খুনির বিচার চাই” স্লোগান দিতে দিতে কুদ্দুস সিকদারের নির্মাণাধীন বসতঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়। এসময় জনতারা বিক্ষোভ মিছিল থেকে দ্রুত খুনিদের ফাঁসি নিশ্চিত করার দাবি জানান। ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস গিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে ঘরটি আগুন পুড়ে কয়লা হয়ে যায়।

নিহত শামিমের স্ত্রী আয়শা বেগম বলেন, “আমার দুই ছোট বাচ্চা এখন এতিম হয়ে গেল! আমার স্বামীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আমি দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই!” রেজাউলের স্ত্রী খাদিজা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা পুলিশের সহযোগিতা নিয়েছিলাম, পুলিশ কাজ বন্ধও করিয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না। কুদ্দুস সিকদার ও তার ছেলে পরিকল্পিতভাবে আমার দেবরকে মেরে ফেলল। আমার স্বামী ও শ্বশুরের অবস্থাও ভালো না।”

প্রতিবাদে চাচার ঘর পুড়িয়ে দিলো জনতা

গলাচিপা থানার ওসি মোঃ আশাদুর রহমান বলেন, “এ ঘটনায় মামলা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। লাশ পোস্টমর্টেম শেষে লাশ দাফন করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। দ্রুতই আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে।” ওসি আরও বলেন, এদিকে রোববার দুপুরের দিকে শামীমের লাশ দাফন শেষে উত্তেজিত জনতা কুদ্দুস সিকদারের বসতঘরে আগুন দিয়ে পুড়ে ধ্বংস করেছে বলে জানা গেছে।

চাচার হাতে ভাতিজা খুন, প্রতিবাদে চাচার ঘর পুড়িয়ে দিলো জনতা

আরও পরুনঃ কলাপাড়ায় প্রথম বিভাগ ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে টুটুল-মেহেদী জুটি চ্যাম্পিয়ন