প্রযুক্তির অপব্যবার অশ্লীলতা ও নৈতিক অবক্ষয়;মু,আবিদুর রহমান

প্রযুক্তির অপব্যবার অশ্লীলতা ও নৈতিক অবক্ষয়;মু,আবিদুর রহমান

মু,সাইফুল ইসলামঃ লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি।বিজ্ঞানের নূন্যনতুন আবিষ্কারের মধ্যে প্রযুক্তির নানামুখী উদ্ভাবন মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহ তা’য়ালার বিশেষ নেয়ামত।জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করা এবং চর্চার মাধ্যমে নব নব উদ্ভাবন মানুষের জন্য ইসলামে নিষিদ্ধ নয়।জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে চিন্তা ও গবেষনার নির্দেশনা দিয়ে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানসম্পন্ন লোকদের জন্য।যারা দাঁড়িয়ে ,বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরন এবং চিন্তা গবেষনা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে (তারা বলে) হে আমার পালনকর্তা এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি।সকল পবিত্রতা তোমারই! আমাদিগকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাচাঁও।(সূরা আল ইমরান:১৯০-১৯১)

তথ্য প্রযুক্তি মূলত প্রযুক্তির একটি বিশেষায়িত অংশ।প্রযুক্তি হলো বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের একটি আবশ্যিক ফলাফল।প্রযুক্তির যে অংশ তথ্য সম্পর্কিত অথাৎ তথ্য উপাত্ত সংরক্ষণ,গ্রহণ,আদান-প্রদান ও বিশ্লেষন করে তাকে তথ্য প্রযুক্তি বলে।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । যা মানুষের জন্য মহান রবের বিশেষ অনুগ্রহ।যার ফলে অনেক কঠিন কাজ সহজে এবং ঘরে বসেই সমাধান করা যায়।প্রযুক্তির নব নব আবিষ্কার আমাদের জীবনকে সহজতর করলেও আমরা সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারছিনা এবং এর রয়েছে নানামুখী অপব্যবহার।তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারনে সমাজের মধ্যে অশ্লীলতা বেড়ে চলছে এবং দিন দিন আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নীতি-নৈতিকতা।পৃথিবীর সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশেও বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা।বিটিআরসি মার্চ-২১ এর তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারকারী সংখ্যা ১৭কোটি ৪৬লাখ৩০ হাজার।ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা১১কোটি ৬১লাখ ৪০হাজার।ফেসবুক ব্যাহারকারী সংখ্যা ৪কোটি ৮২লাখ ৩০হাজার।
প্রযুক্তির কল্যাণে পুরো বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়।প্রযুক্তির সমৃদ্ধতার সাথে সাথে এর অপব্যবহার বেড়ে চলছে।একসময় তরুন বা যুবকেরা অবসর সময় কাটাতো বই পড়ে বা খেলাধুলা করে।কিন্তু বর্তমানে আমাদের চারদিকে নজর দিলে দেখা যায় অনেক বন্ধু একত্রে অনলাইন গেমে আসক্ত,কেউ পর্নোগ্রাফিতে ,কেউ মুবি দেখার মধ্যে আবার কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সময়টুকু ব্যয় করে ফেলছে।অনলাইনের প্রতি আসক্তির ফলে সামাজিক দক্ষতা,পড়াশুনা বা স্বাস্থের প্রতি কোন খেয়াল থাকে না।ইন্টারনেটের প্রতি অধিক আসক্তির ফলে আমাদের মাঝে অশ্লীলতা ,হতাশা ও বিষন্নতা বেড়ে যায় এবং মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
ইসলাম সকল অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন।মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, যারা চায় মু’মিনদের সমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক তারা দুনিয়ায় ও আখিরাতে যন্ত্রনা দায়ক শাস্তি ভোগ করবে-(সূরা আন নুর:১৯)।অশ্লীলতা,সন্ত্রাস,সময় অপচয়,যৌন হয়রানি সবই ইসলামের দৃষ্টিতে জগন্য অপরাধ।রাসূল (সা:) অশ্লীলতার ব্যাপক প্রসারকে কেয়ামতের আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।পাপ হলো শেকলের মতো,যা পাপকারীকে আটকে রাখে যেন সে তাওহীদের বিশাল বাগানে বিচরণ করতে এবং সেখানকার ফল সৎকর্মসমূহ সংগ্রহ করতে না পারে।
আসক্তিকে যদি আমরা নিয়ন্ত্রন করতে পারি তাহলে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করতে পারবো (ইনশাআল্লাহ)।হাসান বসরি (রহ:) বলেন,অনেক আত্মগোপনে থাকা মানুষকে তার আসক্তি বন্দি করে ফেলে,অতপর যখন সেই গোপন পর্দা খুলে যায় তখন তা আবরণশূণ্য হয়ে পড়ে।কামনা, বাসনা ও আসক্তির পূজারী হল একজন দাস, কিন্তু যে তার আসক্তিকে নিয়ন্ত্র করতে পারে তখন সে সত্যিকার বাদশায় পরিনত হয়।
আল্লাহর নির্দেশিত পথে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা মুমিনের কর্তব্য।প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশিত পথ অনুসরন করে ব্যক্তিগত ভাবে সচেতন হওয়া আবশ্যক। এবং এর সঠিক ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন নিজের মধ্যে তীব্র ইচ্ছা শক্তির।দিনের একটি নির্দিস্ট সময়ের বাহিরে এর ব্যবহার না করা।প্রযুক্তি ব্যবহারসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তা’য়ালাকে ভয় করা।তিনি সর্বদা আমাদেরকে দেখছেন এই অনুভূতি অন্তরে জাগ্রতা রাখা।ইমাম শাফেঈ (রহ:) বলেন,তুমি যখন একা থাক তখন তুমি এ কথা বল না আমি একা,আমাকে কেউ দেখেন না,বরং তুমি বল অবশ্যই আমার উপর পাহারাদার নিযুক্ত আছেন।আর তুমি একথা মনে করো না যে আল্লাহ ক্ষনিকের জন্য বেখবর।
অশ্লীলতা এবং খারাপ কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় যদি আমার মূত্যু হয় তাহলে আমার শেষ ঠিকানাতো হবে জাহান্নাম এই চিন্তা সর্বদা অন্তরে লালন করা।প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে তা সবার জন্য হয়ে উঠবে কল্যানকর। প্রযুক্তি ব্যবহারে হতে হবে শুদ্ধ ও নৈতিক।নীতি-নৈতিকতার নির্দেশনা ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্বময়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মতামত জানান