নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার সর্ব দক্ষিণের একটি ইউনিয়নের নাম চর এলাহী ইউনিয়ন।
এই ইউনিয়নের পূর্ব দক্ষিণে রয়েছে চট্রগ্রামের সন্দীপ উপজেলার উড়িরচর ইউনিয়ন। উড়িরচর ও চর এলাহীর ইউনিয়নের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে একটি নদী, নদীটির নাম বামনীয়া নদী।
প্রতিবছর বর্ষা এলেই ভয়ংকর রূপ ধারণ করে রাক্ষসী এই বামনীয়া নদী। তার রাক্ষসী থাবায় বিদ্ধস্ত হয় চর এলাহী ইউনিয়নের শতশত একর ফসলী জমি, নদী গর্বে হারিয়ে যায় হাজার হাজার মানুষের মানুষের বাড়িঘর। চর এলাহী ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গত ত্রিশ বছর যাবত এই ভাঙ্গা গড়ার মধ্যদিয়েই অতিবাহিত হচ্ছে আমাদের জীবন। ক্ষণে এখানে তো ক্ষণে ওখানে, এভাবেই যাযাবরের জীবন আমাদের।
স্থানীয়রা আক্ষেপ করে বলেন, আমরা বাংলাদেশের এমন একটি নির্বাচনী এলাকার মানুষ যে এলাকাটার মানুষ সবসময়ই মন্ত্রী পেয়ে থাকে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় যে দলই থাকুক আমরা মন্ত্রী পাই, কিন্তু আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে না। চর এলাহী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বয়োবৃদ্ধ আনোয়ার হোসেন (ছদ্মনাম) বলেন গত ত্রিশ বছরে আমি ছয়বার আমার বাড়ি স্থানান্তরিত করেছি আর ছয়বারই রাক্ষসী এই বামনীয়া নদী আমার বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন আমাদের নেতা মন্ত্রীরা বারবার আমাদের আশা দিয়েছেন নদীর পাড়ে ব্লক বসাবেন, নদীতে ক্রসড্যাম নির্মাণ করবেন, কিন্তু এতো বছরেও তারা কিছুই করেননি। আর করবেন বলে মনেও হয় না। আনোয়ার হোসেন ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, তারা কেউ কথা রাখেনি। শুধুমাত্র ভোট পাওয়ার জন্য আমাদেরকে আশা দিয়েছেন।
চর এলাহী ইউনিয়নটি মূলত নোয়াখালীর নির্বাচনী আসন ৫ এর অন্তর্ভুক্ত,
এই আসন থেকে বারবার এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন প্রয়াত বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তিনি বাংলাদেশ সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন, কিন্তু তার সময় কালেও চর এলাহী ইউনিয়নের নদী ভাঙন প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ করা হয়নি। বর্তমানে এই আসন থেকে নির্বাচিত এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনিও এই আসন থেকে কয়েকবারই এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, দায়িত্ব পালন করেছেন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের তার আমলেও এই ইউনিয়নটির নদী ভাঙন সমস্যার স্থায়ী কোনো সমাধান করা হয়নি। তবে তিনি বেশ কয়েকটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছিলেন জলোচ্ছ্বাস থেকে ইউনিয়নটি রক্ষা করার জন্য, সেগুলো ও ইতিমধ্যে নদী গর্বে বিলীন হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য ইতিমধ্যে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে চর এলাহী ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ড মানচিত্র থেকে মুছে গেছে, নদী গর্বে হারিয়ে গেছে হাজার হাজার একর ফসলী জমি, বিলীন হয়ে গেছে বহু স্কুল মাদ্রাসা, মসজিদ মক্তব, রাস্তাঘাট সহ অগণিত বাড়িঘর।
সরকার নদী ভাঙন প্রতিরোধে একটি ক্রসড্যাম নির্মাণ করার ঘোষণা দিলেও সেটি কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ আছে বাস্তবে রূপ নেয়নি এখনো পর্যন্ত।