সংবাদদাতা বাউফলঃ পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কাছিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষকদের উপস্থিত হতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ওই অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন কাছিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. বাবুল আক্তার।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কালিশুরী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ও কালিশুরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নেছার উদ্দিন সিকদার, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোসারেফ হোসেন খান প্রমুখ।
সাংসদ আ স ম ফিরোজের সফরসূচি অনুযায়ী আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে কাছিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের উদ্যোগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে মিলাদ মাহফিল ও দুপুরে খাবারের আয়োজন করা হয়। কাছিপাড়া আবদুর রশিদ চুন্নু মিয়া ডিগ্রী কলেজ মিলনায়তন কক্ষে ওই অনুস্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত চলে ওই অনুষ্ঠান।
সাংসদ আ স ম ফিরোজের সফরসূচির ওই চিঠিতে অংশগ্রহণকারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাষ্ক পড়ে আসতে বলা হলেও কাউকে মাষ্ক পড়তে দেখা যায়নি। এমনকি সাংসদ আ স ম ফিরোজ নিজেও মাষ্ক পড়েননি।
এ উপলক্ষে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কাছিপাড়া ইউনিয়নের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি না দিলেও অধিকাংশ শিক্ষক ওই অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন।
আজ শনিবার সাড়ে ১১ টার দিকে সরেজমিনে কাছিপাড়া ইউনিয়নের আনারকলি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়টি বন্ধ।
এ বিষয়ে জানার জন্য ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: জহিরুল ইসলাম ওরফে হারুনের মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন,‘সভাপতি সাহেব (বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি) তাঁদেরকে এমপি সাহেবের প্রোগ্রামে থাকতে বলেছেন। তাই চারটি ক্লাশ করার পর দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ছুটি দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে আছি।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,সভাপতি বললে তাঁদের সেই অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সুযোগ থাকে না।
ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হলেন কাছিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন,শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দুপুর দুইটার পর অনুষ্ঠানে যোগদান করেছে।
সরেজমিনে দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে পূর্ব কাছিপাড়া দারুল সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসাটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ওই মাদ্রাটির সুপার মো. শহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন,‘দুপুর পৌনে ১২ টার দিকে তিনি শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নিয়ে ওই সভায় গিয়েছেন।কাছিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. বাবুল আক্তার তাঁকে যেতে বলেছেন। কাছিপাড়া ইউনিয়নে তিনটি মাদ্রাসা। ওই ইউনিয়নের সব মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বলেও তিনি দাবি করেন।
তবে,সাড়ে ১২ টার দিকে কাছিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি বন্ধ পাওয়া যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,কাছিপাড়া ইউনিয়নে ১৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয় বন্ধ না থাকলেও অধিকাংশ প্রধান শিক্ষকেরা ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ জালাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনীল চন্দ্র শীল বলেন,‘তিনিও অনুষ্ঠানে ছিলেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের খাওয়ানোর দায়িত্বে তিনি ছিলেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন,’১৫ আগষ্ট সরকারিভাবে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও দলীয়ভাবে পালন করা হয়। সেখানে ১৩ আগষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে মিলাদ মাহফিল অতিউৎসাহী এবং লোক দেখানো ছাড়া কিছুই না ।’
অপরদিকে,নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক বলেন,‘আমরা আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে যেতে বাধ্য। কারণ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁদের কথা না শুনলে চাকুরি থাকবে না। তাই চাকুরি টিকানোর জন্য ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা ও অনুষ্ঠানে যেতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উপস্থিত না হলে তাঁদের (আওয়ামী লীগ) অনুষ্ঠান সফল হয় না।
এ বিষয়ে কাছিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. বাবুল আক্তারের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কাছিপাড়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. শহিদুল ইসলাম আকন বলেন,কাউকে বাধ্য করা হয়নি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগেই দুপুর দুইটার পরঅনুষ্ঠানে যোগদান করেছে। আর তাঁর কলেজে পাঠদান হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।