মসজিদের টাকা আত্মসাৎ’র ঘটনায় প্রতিমন্ত্রীসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত

মসজিদের টাকা আত্মসাৎ’র ঘটনায় প্রতিমন্ত্রীসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত.

নিজস্ব প্রতিনিধি, পটুয়াখালী কলাপাড়ার খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ৪ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা আত্মসাত এর অভিযোগে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো: মাহবুবুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তদন্ত শুরু করেছে জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শকের কার্যালয়, পটুয়াখালী।

অভিযুক্তদের দেয়া জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা মো: জহিরুল হক শাহিন স্বাক্ষরিত নোটিশে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের জমি বিক্রির ৪ কোটি টাকা এবং মসজিদের ফান্ড থেকে উঠিয়ে ৮৪ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সহ আল্লাহর পবিত্র ঘর রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন মসজিদের মুসুল্লী মো: নজরুল তালুকদার বাদশা ও আ: হান্নান।

এছাড়া মসজিদের অর্থ ও সম্পদ
আত্মসাত, অবৈধ ভাবে জমি বিক্রি ও দখলে নেয়া সহ দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন এবং মসজিদের নতুন কমিটি গঠনের জন্য স্থানীয় জাতীয়
সংসদ সদস্য সহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আবেদন করেন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য আ: হান্নান, যা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়।

জানা যায়, ঐতিহ্যবাহী খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদটি নির্মিত হয় ১৯২১ সালে। নির্মানের পর থেকে সুনামের সহিত মসজিদটি পরিচালিত হয়ে আসছে।

মসজিদের নামে খেপুপাড়া মৌজা, ৬নং জেএল, এসএ খতিয়ান নং ৪০৯, যার দাগ নং ১৭৯, ৬৪০ সহ একাধিক দাগে ২১.৯৬ একর জমির ছাপানো রেকর্ড রয়েছে। ২০১১ ইং সালে মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি সুলতান মাহমুদ (আ’লীগ সহ-সভাপতি), সাধারণ সম্পাদক এসএম রাকিবুল আহসান (আ’লীগ সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান), ক্যাশিয়ার মীর আবদুল বারেক (আ’লীগ নেতা) একত্রিত হয়ে মসজিদের জমি হতে ২ কোটি টাকার জমি সাব কবলা দলিল মূলে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাত করেন।

এরপর ২০১৩ সালে উক্ত কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ২০১৭ সালে অবৈধ ভাবে উল্লিখিত কমিটির তিন জন তিনটি সাব কবলা দলিলের মাধ্যমে জমি বিক্রী করে অনুমান ২ কোটি টাকা আত্মসাত করেন। উক্ত তিনটি দলিল মূলে অন্যায় ভাবে মসজিদের জমি ক্রয় করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও উপজেলা আ’লীগ সভাপতি মো: মাহবুবুর রহমান, মহিলা আ’লীগ সদস্য সচিব বিলকিস জাহান ও তার স্বামী মো: ইউসুফ আলী। অবৈধভাবে ক্রয় করা মসজিদের উক্ত জমির বর্তমান বাজার মূল্য অনুমান ১০ কোটি টাকা। এছাড়া মসজিদ নির্মানে মুসুল্লীদের দেয়া দানের ৮৪ লক্ষ টাকা কমিটির তিন জন মসজিদ ফান্ড থেকে উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। এসংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা মো: জহিরুল হক শাহিন অভিযুক্ত ৬ জনকে নোটিশ প্রদান করেন।

এদিকে মসজিদের একাধিক মুসুল্লী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নতুন মসজিদ ভবন নির্মান কাজ, ঈদগাহ মাঠ, ইমাম, মুয়াজ্জিন কোয়ার্টার ও অজুখানা নির্মানে সরকারী বরাদ্দ ও স্থানীয় মুসুল্লীদের অনুদান পাওয়ার পরও মসজিদ কমিটির উল্লিখিত তিন জন মসজিদ তহবিল থেকে টাকা উত্তোলন করে নির্মান খরচ করেন। পুরাতন ভবন ও অন্যান্য ঘর বেশী টাকা নিলামে বিক্রি করে মসজিদ ক্যাশে কম টাকা জমা দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেন। ভবন নির্মানে মুসুল্লীদের দান, অনুদানের সঠিক তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়নি। মসজিদ পুকুরের মাছ বিক্রি করে মসজিদ তহবিলে তারা জমা দেননি। এমনকি উল্লিখিত মসজিদ কমিটির তিনজন দায়িত্বে থাকাকালীন মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাবও বর্তমান কমিটিকে দেননি।

এবিষয়ে মসজিদ কমিটির সাবেক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান বলেন, অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ, ইমাম, মুয়াজ্জিন কোয়ার্টার নির্মান করেছি ৮-১০ বছর আগে। ১১ কানি জমি ক্রয় করেছি। একটা জমি নিয়ে একটু সমস্যা আছে। যা বর্তমান কমিটি চেষ্টা করলে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করে সমাধান করতে পারবে।

খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউএনও আবু হাসনাত মোহম্মদ শহিদুল হক বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে। জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শক অভিযোগের তদন্ত করছেন।

জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শক ও অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির তদন্ত কর্মকর্তা মো: জহিরুল হক শাহিন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করেছি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মতামত জানান